বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা ‘গড়মিলের‘ ঘটনায় দেশে-বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে সংসদীয় কমিটি। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সাবধান হতে বলেছে। এছাড়া, রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
বুধবার (১ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনে অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও সাম্প্রতিক আলোচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা সোনায় গড়মিলের বিষয়টি অনির্ধারিত আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে ভল্টের সোনা ঠিক আছে দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে— গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। এদিকে, বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ভল্টে রাখা সোনা ঠিক আছে। ভল্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নত। ৪২টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে কষ্টি পাথর আর আধুনিক যন্ত্রের মাপে কিছু তারতম্য হয়েছে।’ তিনি জানান, এ ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে এলো কেন— এমন প্রশ্ন রেখে কমিটি বলেছে, এতে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবধান হওয়া উচিত।
রাজস্ব আদায়ে সবার নিচে বাংলাদেশ
বৈঠকে অর্থমন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আদায় দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবার নিচে। এ বিষয়ে গত ১০ বছরেও উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে দেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণ গড়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ ভারতে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, নেপালে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। উন্নত অর্থনীতির দেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণ গড়ে ৩৫ দশমিক ৮ শাতংশ। অন্যান্য দেশের রাজস্ব আয় সংগ্রহ পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রয়োজনে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়ে ভ্যাট–ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি না থাকায় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এনবিআর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে বলা হয়— ব্যাংকগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত সুদ ও সার্ভিস চার্জের কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার কমানো এবং গোপন চার্জের মাধ্যমে গ্রাহক ভোগান্তি কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ফরহাদ হোসেন ও শওকত চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।
Powered by : Oline IT