জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘আমাদের দেশে একসময় আইন ছিল না, এখন চমৎকার একটি আইন হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারের একটি প্ল্যান অব অ্যাকশন আছে। এরপরও মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। এর মানে হলো কোথাও না কোথাও একটা গ্যাপ আছে।’
রবিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম আয়োজিত ‘মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন’ পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়া ডায়লগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘একটি মেকানিজমের মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে প্রকৃত শিক্ষিত লোকদের আনা দরকার। কারণ সরকারের পক্ষে এত লোক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এই রিক্রুটিং এজেন্টগুলো যেমন আমাদের ভুগিয়েছে, আবার এই রিক্রুটিং এজেন্টগুলো মার্কেটও তৈরি করেছে। তাই সঠিক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যদি থাকে, এই প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যদি আউট হয়ে যায়, সঠিকভাবে যদি আমরা একটি মেকানিজম তৈরি করতে পারি তাহলে মাইগ্রেশন সিস্টেমকে একটি আকারে নিয়ে আসা যাবে।’ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমাদের মানুষদের ফেরত আসা আর দেখতে চাই না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘এজন্য সরকার ও সুশীল সমাজের যারা আছেন তাদের অর্জনগুলো তুলে ধরতে হবে। আমরা সৌদি আরব এবং ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ থেকে ফেরত আসা আর দেখতে চাই না।’
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানবপাচারের সবচেয়ে বড় কারণ অজ্ঞতা। অজ্ঞতার কারণেই বিদেশগামী কর্মীরা দালালের দ্বারস্থ হয়, নিজের অধিকার সম্পর্ক সচেতন নয় বেশিরভাগ কর্মী।এই মানব পাচার আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। দেশে মানব পাচারের চার হাজার মামলার মধ্যে মাত্র একটি মামলার আসামির শাস্তি হয়েছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক। মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য যা যা দরকার করতে হবে। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
সিআইডির স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন ও ইন্টেলিজেন্সের ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, ‘মানব পাচারকারীদের মূল হোতারা সংখ্যায় খুব অল্প। একদিকে মামলা রুজু হয়, আবার আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। আমরা এত কিছু করে পাচারকারীদের কোনও মেসেজ দিতে পারছি বলে মনে হয় না। মুখ্য আয়ভোগীদের কীভাবে ধরতে হবে সে বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমাদের দেশে রেমিট্যান্স আসে তার হিসাব আছে, কিন্তু রেমিটেন্স যে যায় সেটার কোনও হিসাব আমরা রাখি না। যারা বিদেশ যায় তাদের কাছ থেকে যদি আগেই টাকা নিয়ে নেয় তাহলে সে কী করবে?
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর বলেন, ‘সরকারের অনেক লিমিটেশনের মধ্যে চেষ্টা করেও পারছে না। আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুবাদে দেখেছি, আমাদের লোক কথা শোনেন না। তারা কাজ ছাড়াই ফ্রি ভিসা শুনেই পাড়ি জমান। তারপর গিয়ে বিপদে পড়ে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার এবং অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে।
ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এম্পাওয়ারমেন্ট কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ্’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) মোহাম্মদ শামসুর রহমান, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশের চিফ অব মিশন জর্জি গিগরি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের হেড অব কোঅপারেশন মারিও রনকনিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি অভিবাসন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
Powered by : Oline IT