আলোচিত ছয়টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে আরও তথ্যের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে বাংলাদেশ এবং এ বিষয়ে আরও উপাত্ত-সংগ্রহ করতে চায় সরকার। গোমতি, খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু ও মুহুরি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বুধবার (৬ জানুয়ারি) যৌথ নদী কমিশনের সদস্য পর্যায়ে বাংলাদেশ ও ভারত টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আরও বিশদ আলোচনা করতে চায় ঢাকা।
দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত দুদিনব্যাপী এই ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি)। বৈঠকের সঙ্গে জড়িত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আলোচিত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ তথ্যের বিশ্লেষণ রিপোর্ট আদান-প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নদীগুলোর ভারত অংশের উপরিভাগে পানি কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়ে আরও তথ্যের প্রয়োজন আছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি নদীর পানিপ্রবাহ একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে পরিমাপ করা হয়। কিন্তু এর উপরিভাগে যদি ওই নদীর পানি কোনও কাজে ব্যবহৃত হয়, তার প্রতিফলন ওই পয়েন্টে নাও থাকতে পারে। সেজন্য নদীর পূর্ণ অংশে পানি কোথায় ও কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে সেটি জানাটা জরুরি।’
বাংলাদেশে পানি কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, এই পানি হয় বাংলাদেশ নিজে ব্যবহার করছে, অথবা বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত যেহেতু উজানের দেশ, সেজন্য তাদের পানির ব্যবহার জানা না থাকলে ন্যায্য হিস্যা বণ্টনে সমস্যা হতে পারে।
আরেকটি সূত্র জানায়, ২০১১ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে একটি কাঠামো চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তির দুটি ধারায় বলা হয়েছে, অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা—যার ফলে উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে এবং এ বিষয় নিয়েও বাংলাদেশ আলাপ করতে আগ্রহী।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, নদীর পানিবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে কোন দেশ কতটুকু পানি পেলো সেই বিষয়টি উল্লেখ থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বর্ষা মৌসুমে পানির ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করতে হলে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হতে হবে।
এদিকে দীর্ঘ তিন বছর পর দ্বিপক্ষীয় টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন মঙ্গলবার গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির রুটিন পর্যালোচনা করা হয়।
একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবারের বৈঠকে শুধু গঙ্গা পানিচুক্তির পর্যালোচনা এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয় বলে জানিয়েছে বৈঠকে উপস্থিত ছিল এমন একটি সূত্র।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে করোনার কারণে অন্যান্য পরিস্থিতি খারাপ হলেও গঙ্গার পানিবণ্টন চিত্রটি ছিল ভিন্ন। গত ৪০ বছরে গঙ্গার পানিপ্রবাহের গড়ের থেকে গত বছর বাংলাদেশ বেশি পানি পেয়েছে।
বুধবারের বৈঠকে ১০টি জেলায় নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ, গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি, রহিমপুর খাল খনন, তিতাস নদীর পানিদূষণ, বন্যা পূর্বাভাস স্টেশন বৃদ্ধি, মহানন্দা নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়াসহ আরও বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ আলোচনা করতে চায়। অপরদিকে, আত্রাই, পুনর্ভবা ও ট্যাংগন নদীর পানি কমে যাওয়া, ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন এবং মাথাভাঙা-চূর্ণী নদীর পানিদূষণ নিয়ে কথা বলতে চায় ভারত।
Powered by : Oline IT