বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর হাতে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলছে, বিএসএফের নির্যাতনের নতুন অভিযোগের ঘটনার তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নিজেদের এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১০ বছর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারত সরকার বিএসএফকে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারীদের বিরুদ্ধে কিছুটা নমনীয় হতে এবং প্রাণঘাতী গুলির পরিবর্তে রাবার বুলেট ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ও ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছে, দুই দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের ওপর বিএসএফ এখনও নিপীড়ন, বিচারবর্হিভূত হত্যা, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, শুধু হামলার স্বীকার হলেই তারা শক্তি ব্যবহার করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘ভারত সরকার বিএসএফকে নমনীয় হয়ে গুলি ব্যবহার না করার যে নির্দেশ দিয়েছিল তা নতুন করে হত্যা, নির্যাতন এবং অন্য মারাত্মক ধরণের নির্যাতন রুখতে পারেনি। সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে জবাবদিহি করতে না পারার কারণেই দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে নতুন করে নির্যাতন এবং হয়রানির বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ভারত সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযমী হতে এবং বেআইনি হত্যা বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সময় ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধের আশ্বাসও দিয়েছিল।
বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৩৩৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৫১ জনকেই হত্যা করা হয়েছে ২০২০ সালে।
ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা মাসুম ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএসএফ-এর হাতে ১০৫টি হত্যার তদন্ত করেছে। তারা বলছে যে, এসব হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।
মাসুম বলছে, বিএসএফ সন্দেহভাজনদের বেআইনিভাবে আটক ও নির্যাতন করেছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি ও হুমকি দিয়েছে।
বাংলাদেশ বরাবরই সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ করে আসছে। গত অগাস্টে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত হত্যার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, ‘বাংলাদেশ বিষয়টিকে সব ধরণের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে।’
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিএসএফের কোনও সদস্যকে জবাবদিহি করার কোন ঘটনা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানতে পারেনি বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত ১৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি খাতুন হত্যার ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারানোর পর কাঁটাতারে ঝুলে ছিল তার লাশ।
২০১৩ ও ২০১৫ সালে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দুই দফা বিচারের পর অভিযুক্ত কনস্টেবলকে খালাস দেওয়া হয়। এ মামলায় নতুন করে বিচারের আবেদনটি এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে। সূত্র: বিবিসি।
Powered by : Oline IT