যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বাধীন বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও গোষ্ঠীর চাপ সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায় কার্যকর করা হয়েছে।’
সোমবার ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ক্লাবটির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আনিসুল হক বলেন, ‘দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্ব শর্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার সুসংহত আইনি কাঠামোসহ ব্যাপক জনপ্রশংসিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে কার্যকরভাবে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ হতে পৃথক করা হয়েছে। বিচার বিভাগ আজ স্বাধীনভাবে বিচার কাজ সম্পন্ন করছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি হতে বের করে আনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও গোষ্ঠীর চাপ সত্ত্বেও জনগণের সমর্থন নিয়ে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আন্তর্জতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায় কার্যকর করা হয়েছে। এই বিচার করতে পারা স্বাধীন বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন— আইনজীবী সমিতি ভবন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়ন করা হয়েছে। জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে ডিজিটাল ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আইনের সমান সুযোগ লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার বিভিন্ন সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতা ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীনতার যে মহামন্ত্র দিয়ে গেছেন, সেই মন্ত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মধ্যেই রয়েছে পরনির্ভরতা দূরে ঠেলে বাঙালির আত্মমর্যাদাশীল হয়ে ওঠার গল্প।’
মন্ত্রী শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের লাগাম টেনে ধরবার জন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এ থেকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। দেশ ও দেশের আপামর জনতার জীবনমানকে উন্নত করার যে চ্যালেঞ্জ আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে গ্রহণ করেছি, সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থতার কোনও সুযোগ নেই। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক বলে বলীয়ান হয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিল, বিশ্ব মানচিত্রে লাল সবুজের এক নতুন ছবি অঙ্কন করেছিল, আমাদেরকেও তেমনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃপ্ত শপথ নিতে হবে এবং কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নত শির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাফল্যকে ‘বিশ্বের বিস্ময়’ হিসেবে তুলে ধরছে বিশ্বব্যাংকসহ নানা সংস্থা। লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমানোর সূচকে শেখ হাসিনার সাফল্যে বিশ্ব রীতিমত হতবাক। নারী-পুরুষের অসমতা দূর করার কাজে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবার থেকে এগিয়ে।’
অফিসার্স ক্লাবের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সেক্রেটারি মো. ইবরাহিম হোসেন খান। এর আগে আলোচনা সভার শুরুতে অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্তদের মাঝে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন আইনমন্ত্রী।
Powered by : Oline IT