সিটিজি জার্নাল নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই প্রধান জোটের বাইরে থাকা উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত দলগুলোকে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের আদলে নির্বাচনী জোট গঠন করতে চায় বিএনপি। আর সম্ভাব্য নতুন ওই জোটে নতুন শরিক হওয়া দলগুলোকে ২৫ থেকে ৩০টি আসন ছেড়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, ওই লক্ষ্যে দলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে; যদিও এ নিয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের উদ্দেশে কিছু নতুন বার্তা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ জন্য তাঁর বক্তব্যের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘাতমূলক পরিস্থিতি এড়ানোর মতো বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। এখনই কঠোর আন্দোলনের কথা তিনি বলবেন না। সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের সভায় ‘আন্দোলন’ শব্দটি পর্যন্ত খালেদা জিয়া বলেননি বলে জানিয়েছেন ওই সভায় উপস্থিত থাকা একটি শরিক দলের প্রধান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়ার ঘটনাই ইঙ্গিত দেয় যে তিনি সব দলকে নিয়ে সরকারবিরোধী ঐক্য চান। নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়টি নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তখন হয়তো স্পষ্ট হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হবে কি না তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ৭ ফেব্রুয়ারির বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চান খালেদা। গতকাল রবিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বক্তৃতার খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের সমর্থক সুধীসমাজের একটি অংশের পরামর্শে রায়ের আগের দিন ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার নেপথ্যেও তাদের ভূমিকা ছিল। তাদের পরামর্শেই গণসংযোগে আজ সোমবার সিলেট সফরে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এই সফরের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা তৈরির পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হবে বলে তাঁরা বুঝিয়েছেন।
উদারপন্থী দলগুলোকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শও সমর্থক সুধীসমাজের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, ওই পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েই নির্বাহী কমিটির সভায় ‘জাতীয় ঐক্যের ডাক’ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আপাতত অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যকে জোটে টানার প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন। সূত্র মতে, ওই নেতা এরই মধ্যে চারটি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন। সুধীসমাজের প্রতিনিধি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নির্দিষ্টসংখ্যক আসন দিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের কথা আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি।’ তাঁর মতে, উদারপন্থী দলগুলো বিএনপির সঙ্গে থাকলে লাভ। কারণ এতে তারা সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবে। অন্যদিকে বিএনপি তাদের সঙ্গে নিলে শক্তি বাড়বে। একটি ভালো পার্লামেন্ট হলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারকে বিচলিত করতে হলে খালেদা জিয়াকে জনগণের কাছে যেতে হবে। সেদিক থেকে সিলেটে যাওয়ার কর্মসূচি ইতিবাচক। কিন্তু আমি মনে করি, তাঁর আরো আগে নামা উচিত ছিল।’
বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, সেটি ইতিবাচক। বক্তব্যে সহিংসতা সৃষ্টির উসকানি না থাকার ঘটনায়ও আমরা সন্তুষ্ট। তবে নির্বাচনী জোট নিয়ে কমেন্ট করা—ইট ইজ টু আরলি। তা ছাড়া জনগণ যেদিকে যাবে বিকল্পধারাও সেদিকে থাকবে।’
জেএসডি সভাপতি আ স ম রব এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির হয়তো আগ্রহ আছে। কিন্তু এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। তবে খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাক ‘ইতিবাচক’ বলে মনে করেন ওই দুই নেতা।
দলীয় সূত্রের দাবি, সুধীসমাজের ওই অংশটি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে ‘হঠকারী’ লাইনে না যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে। তারা বুঝিয়েছে, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এখনই সর্বাত্মক আন্দোলনে গেলে সরকার মামলা দিয়ে আবারো হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢোকানোর সুযোগ পাবে। ওই অবস্থায় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের প্রয়োজন হলে তখন আর কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওই পরামর্শেই ‘ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গড়ে তোলার’ জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
সূত্র মতে, দলের এমন অবস্থানের উদ্দেশ্য হলো আন্দোলনকে নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া। আর এ জন্যই খালেদা জিয়া নির্বাচন সামনে নিয়ে কথা বলেছেন। নির্বাহী কমিটির সভায়ও তিনি বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন হতে হবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
একে/এম
Powered by : Oline IT