পঞ্চম শ্রেণি পাস করে শ্রমিক হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেন এস এম শামসুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব ওরফে দোহা। সেখানে বিবিএ পাসের ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন। দীর্ঘদিন অবস্থান করায় ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষাও রপ্ত করেন। দেশে ফিরে নিজেকে প্রথমে পরিচয় দিতেন লি সান হো নামে। পরে কখনও নেহাল চৌধুরী, কখনও আদিল, কখনও অনিক। এরপর সরকারি-বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে দেশি-বিদেশি বড় প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর জানা গেল এসব তথ্য।
ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের শেয়ার দেওয়ার নামে চলতো দোহার প্রতারণা। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন তিনি। অস্ত্রধারী নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও ছিল তার। জোরপূর্বক জমি দখল করার কাজে লাগাতো ওই বাহিনীকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব আরও জানতে পারে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনবার বিয়ে করেছেন দোহা। রয়েছে সন্তানাদিও। তার প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পায়নি নারীরা। নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠ হতেন তাদের সঙ্গে। কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে ভিডিওচিত্রও ধারণ করতেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীদের বাধ্য করতেন বিভিন্ন ব্যক্তির শয্যাসঙ্গী হতে।
১৬ মার্চ রাতে রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব তথ্য পায় র্যাব। প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা রয়েছে।
এতদিন পলাতক ছিলেন দোহা। তার চক্রের অন্যদের গ্রেফতারে তৎপরতা চলছে।
WAO Group of Company নামে নামসর্বস্ব অনুমোদনহীন একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় অফিস ভাড়া নেন দোহা। সেখানেও সমানতালে চলে প্রতারণা, চাকরির প্রলোভন ও সরকারি দফতরে তদবিরের কাজ। বিদেশি প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন কোটি টাকা। এরপর একপর্যায়ে লাপাত্তা হন তিনি।
র্যাব ৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তার প্রতারণার হাত থেকে বিদেশি নাগরিকরাও রেহাই পায়নি। কোরিয়ার জং নামে এক ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর লোভ দেখিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সে। তার কাজে যেন কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য মিরপুর ডিওএইচএস-এর অফিসে বিভিন্ন সময় বিদেশিদের নিয়েও মিটিং করেছে। এ ছাড়াও জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়েছে।
তিনি বলেন, এই চক্রে জড়িত বাকিদের আইনের আওতায় আনা হবে। দোহার কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
Powered by : Oline IT