নিজস্ব প্রতিনিধি,
ঃ কাপ্তাই হ্রদের পানি কম ছাড়ার কারণে ভাসা জমিতে এখনও চাষাবাদ শুরু করতে পারেননি কৃষকরা। নভেম্বর থেকে বীজতলা তৈরির কথা থাকলেও পানি না কমায় বীজতলা তৈরি ও চাষাবাদ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে সময় মতো ঘরে ফসল তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।বর্ষা মৌসুমে হ্রদের পানির নিচে ডুবে থাকা জমি শুকনা মৌসুমে আবাদের উপযোগী হলে এসব জমিতে কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের রবিশস্য ও সবজি চাষ করেন। হ্রদের পানির উচ্চতা অনুসারে ৯৬ এমএসএল’র ওপরে থাকা জমিকে ভাসাজমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করা হয়। জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধের কারণে সে সময় প্রচুর আবাদি জমি হ্রদের পানিতে ডুবে যায়। বর্ষায় হ্রদে পানি জমা হওয়ার পর রুলকার্ভ অনুসারে বছরের বিভিন্ন সময় পানির স্তর বাড়ানো কমানোর ফলে এসব ভাসাজমি আবাদের আওতায় আসে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এবছর দেরিতে পানি ছাড়ার কারণে অনেক জমিতে বোরো চাষ বিলম্ব হচ্ছে। ফলে ফসল ঘরে তোলার আগেই বর্ষার পানি চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
রাঙাপানি এলাকার কৃষক বসন্ত চাকমা বলেন, ‘আমরা নভেম্বর থেকে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করি। ডিসেম্বরের মধ্যে চারা রোপণ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার পানি না কমায় এখনও বীজতলায় তৈরি করতে পারেনি।’
লুম্বিনী আলুটিলার কৃষক সৌরভ চাকমা বলেন, ‘পানি ছাড়তে দেরি হলে চাষাবাদ শুরু হতে দেরি হয়। এতে অনেক সময় ফসল ঘরে তোলা যায় না।’
একই এলাকার কৃষক সূর্যমনি চাকমা বলেন, ‘ঠিক সময়ে চাষাবাদ শুরু করতে না পারলে অনেক কৃষকের ভাত জুটবে না। আগে ঠিক সময়ে পানি ছাড়া শুরু করলেও গত কয়েক বছর ধরে পানি দেরিতে ছাড়ছে। এতে কৃষকরা ঠিক সময়ে চাষাবাদ শুরু করতে পারছে না।’
গত কয়েক বছর চাষ ঠিকমতো করতে না পারায় অনেকে চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ চাষযোগ্য জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেকে আবার জমিতে ঘর নির্মাণ করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, এখনও অনেক জায়গায় বীজতলা তৈরি করতে পারেননি কৃষক। পানি দেরিতে ছাড়ার কারণে তাদের এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত পানি ছাড়ার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম ভাগে লংগদু,বাঘাইছড়িতে কিছু জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আশা করছি ঠিক সময়ে পানি ছেড়ে দিলে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা সৃষ্টি হবে না।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, রাঙামাটি জেলার ৪০ ভাগ খাদ্য উৎপাদন হয় এ জলে ভাসা জমিতে। প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়। পানি কমানোর ব্যবস্থা না করলে কৃষকদের খাদ্য সংকটে পড়ার শঙ্কায় আছে কৃষকরা।
একে/এম
Powered by : Oline IT