বাংলাদেশ কখনও জঙ্গি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশে পরিণত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা দেশকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দেশের মানুষ উন্নত জীবন দেখতে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারাটাই আমাদের সার্থকতা। আমাদের চাওয়া, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয়। কিন্তু কেউ কেউ আছে, স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। আমাদের চাওয়া— তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। বাংলাদেশ কখনও জঙ্গিদের দেশ হবে না, স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশ হবে না; বাংলাদেশ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ।’
মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভার শুরুতেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বিভিন্ন খাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার তীব্র বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার সব প্রস্তুতি জাতির পিতা নিয়ে রেখেছিলেন। তিনি খাওয়ার টেবিলে বসে বলতেন, ছয় দফা মানে তো এক দফা— স্বাধীনতা। কিন্তু সেটা মুখে বলা নিষেধ ছিল। আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে যেন কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য সব ধরনের কূটনীতি তিনি রক্ষা করে চলেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন যেমন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট রয়েছে, ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগেও ২০ দলের একটা জোট ছিল। সবসময়ই যেন আমাদের জন্য এমন বিষকাঁটা থাকে। তখন ষড়যন্ত্র শুরু হয়, আওয়ামী লীগ যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে। নির্বাচনে জিতেও তাই ক্ষমতায় আসতে পারল না আওয়ামী লীগ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন, বাংলার মাটিতে পাকিস্তানিদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ৭ মার্চের ওই ভাষণেই বঙ্গব্ন্ধু যুদ্ধের প্রস্তুতির সব নির্দেশনা দিয়ে গেলেন।’
১৯৭০ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে বসেই মুক্তিযুদ্ধের সব পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার অলিখিত ঘোষণা দেওয়া হলেও ২৬ মার্চের আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রস্তুত করে রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ২৫ মার্চ রাতে তাই যখন পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন বঙ্গবন্ধুর ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র সেই ঘোষণা প্রচার করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের পর মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা বলেন, গবেষকরা বলতে পারবেন— যুদ্ধের ভয়াবহতা ভুলে যেভাবে একটি প্রদেশকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা সাধারণ কোনও ঘটনা নয়। পৃথিবীর অন্য কোনও নেতা এটা করতে পারেননি। জাতির পিতা স্বাধীনচেতা একটি দেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তার সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচির সুফল যখন মাত্র দেশ পেতে শুরু করেছে, তখনই তাকে প্রাণ দিতে হলো।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসানো হলো। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হলো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হলো অকথ্য নির্যাতন। ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যেন আমরা স্বাধীন কোনও দেশে বাস করি না। আজ যে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বস্বীকৃতি পেয়েছে, সেই ভাষণ একসময় নিষিদ্ধ ছিল। টিভিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বা নাম এলে সেই জায়গাটি ঝিরঝির করে দেওয়া হতো। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬— ২১ বছরে একটা কদমও এগোয়নি বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আমরা দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করি। আমরা বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলি। চেষ্টা করলে যে পারা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছিলাম। কিন্তু বিএনপির অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো নয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায় না। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল, দেশ ভিক্ষা করবে। অন্যদের সাহায্য নিয়ে চলবে। তারা কেবল নিজেদের উন্নতি চেয়েছে, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যাথা ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য— মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। আমাদের নিজেদের কোনও স্বার্থ নেই। দেশের মানুষের উন্নতি হলেই আমরা খুশি। কিন্তু তাদের লক্ষ্য কেবল দুর্নীতি, সম্পদের পাহাড় গড়া, নিজেদের ইচ্ছেমতো সাজুগুজু করা। দেশের মানুষ না খেয়ে থাকলে তাদের কিছুই যায় আসে না।
বিপরীতে দেশের মানুষের উন্নয়নই নিজেদের উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধী, যারা স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে যেতে দিতে চায় না, যারা স্বাধীনতার মহান অর্জনকে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিতে চাই, এই দেশ কখনও জঙ্গিদের দেশ হবে না, এই দেশ কখনও স্বাধীনতাবিরোধীদের হবে না; এই দেশ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ।
Powered by : Oline IT