কোনও কারণে যদি দলীয় কমিটিতে আর জায়গা না হয়, কিংবা নিজেই না থাকেন তাহলে কী করবেন সেটা স্পষ্ট করেছেন নোয়াখালীর বসুরহাট উপজেলার আলোচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই জানিয়েছেন, তেমন কিছু যদি শেষ অবধি ঘটে যায় তাহলে দলের বদলে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বসুরহাট পৌরসভা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের ওপর হামলা পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি কথা বলতেছি জনস্বার্থে। প্রতিপক্ষ কথা বলতেছে নিজস্ব স্বার্থে। তবে জাতীয় নেতারা কেন চুপ করে আছে, তা আমি জানি না। উনাদের হস্তক্ষেপে যারা অপরাজনীতি করে, তাদের সাথে আমি রাজনীতি করতে পারবো না। প্রয়োজনে আমি আওয়ামী লীগে থাকতে না পারলে, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য হিসেবে আমি কাজ করবো। আমার আধিপত্য বিস্তারের প্রয়োজন নেই। আমার কাছে অস্ত্র নেই। অস্ত্র দিয়ে আমি রাজনীতি করি না।’
ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা, লুটপাট, মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের মঞ্চ ভাঙচুর, তার অফিস ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষের হামলার অভিযোগ এনে কাদের মির্জা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
কাদের মির্জা আরও বলেন, দলের বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক দু’জনই জাসদের লোক। দুই জনকেই আমি জাসদ থেকে এনেছি। দুই জনই হাইব্রিড। খিজির হায়াত জাসদের প্ররোচনায় এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। তাদের এ কমিটি আমরা মানি না। আমরা গঠনতান্ত্রিক উপায়ে এখানে কমিটি করছি। সেই কমিটির নেতৃত্বে এখানে (কোম্পানীগঞ্জে) আওয়ামী লীগ চলবে। এটাই হলো শেষ কথা। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতে আমি নেত্রীকে মেসেজ দিলে, তিনি আমাকে বলেন, তুমি চুপ থাকো। বিষয়টি আমি দেখছি। এজন্য আমি সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সাংবাদিকদের ডেকেছি, তারা এখানকার অবস্থা দেখুক।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে কাদের মির্জা বলেন, ওইখানে খিজির হায়াত খান তার অনুসারীদের নিয়ে হট্টগোলের চেষ্টা করলে আমি সেখানে গিয়ে তাদের সরে যেতে বলেছি এবং খিজির হায়াত খানকে রিকশায় তুলে দিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছি।
সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার কী অপরাধ ছিল? তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এসময় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা সদ্য সমাপ্ত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের বৈতরণী পার হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগে সংস্কার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন। পুরো পৌর নির্বাচনে প্রতিদিনই নানা প্রসঙ্গে সংবাদ শিরোনামে ছিলেন তিনি। জেলা নেতাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এবং দলীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার সমালোচনার ধার আরও বেড়ে যায়। রাজধানীতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়াসহ উপজেলা কমিটি বিধিবিরুদ্ধভাবে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নানা ঘটনার মধ্যেই দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির নামে একজন স্থানীয় সাংবাদিক। সর্বশেষ সোমবার (৮ মার্চ) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত খানের দিকে তাকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। পরে ছেঁড়া পোশাকে দাঁড়িয়ে খিজির হায়াত খান দাবি করেন তার ওপর হামলা করা হয়েছে।
Powered by : Oline IT